Header Ads

  • Recent Posts

    তুমি ভালো আছো এটা জানলেই আমি ভালো থাকবো

    তুমি ভালো আছো এটা জানলেই আমি ভালো থাকবো

     

    মফস্বলের এক গেঁয়ো ছেলে। বাবা-মার
    ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নিজের পুতুল খেলার
    মত জীবন ছেড়ে দিয়ে আসলো। সে ভর্তি হল শহরের
    ‘অনেক বড়’ একটি স্কুল এ। বড় স্কুল এর প্রথম দিন
    থেকেই তথাকথিত গেঁয়ো হবার সুবাদে সহপাঠীদের
    অবজ্ঞা আর শিক্ষকদের অবহেলার সম্মুখীন হতে হল।
    তারপর শুরু হল ,ধীরে ধীরে সব কিছু মানিয়ে নেবার
    অপচেষ্টা। তাতে কিছুটা সাফল্য অর্জিত হল আর
    বাকি সবটুকুই চেষ্টা ই বিফলে গেল। শত্রু ও
    নাকি বেশিদিন একসাথে থাকলে বন্ধু হয়ে যায়।
    যা হবার তাই হল। সবার সাথেই বন্ধুত্ব। অতঃপর
    বন্ধুতার অপার আনন্দে এক স্বপ্নিল
    জগতে হারিয়ে যাওয়া। দেখতে দেখতে ছেলেটি SSC
    পাশ করে গেল। চলে যায়নি অবশ্য। বাবা-মার
    সীমাহীন বাধার সম্মুখীন হয়েও শুধুমাত্র
    পুরনো বন্ধুগুলোর ভালোবাসার টানে সে আগের
    প্রতিষ্ঠানেই HSC তে ভর্তি হল।
    ‘কলেজ লাইফ’- Frankly Speaking , এ সময়
    টা নাকি ‘পাখা’ গজানোর সময়। ছেলেটা আর সবার
    থেকে খুব বেশি Special ছিলনা । So, তাঁর ও
    পাখা গজালো। কোন একজনকে ভালো ও লাগলো।
    তবে সেটা অবশ্যই ভালোবাসা ছিলোনা।
    ভালোবাসা মানে ‘কি ?’ সে তা জানতো ই না।
    জানা হয়তো উচিৎ ও ছিলনা। তার
    কাছে ভালোবাসা মানে ছিল,
    “একটা ছেলে একটা মেয়েকে পছন্দ করে। করতেই
    পারে। What’s so special on this ?”
    ছেলেটির বয়স বাড়তে থাকে। একদিন-দুদিন, একমাস-
    দুমাস করে। সে বুঝতে শেখে,
    ভালোবাসা মানে একটা ছেলে একটা মেয়েকে ‘Just
    Like’ করা নয়। এর চেয়েও বেশি কিছু। বেশি কিছু না,
    অনেক বেশি কিছুই।
    একটি মেয়েকে ছেলেটির ভালো লাগতো।
    হয়তো ছেলেটি মেয়েটিকে ভালো ও বাসতো।
    ছেলেটি খুব বেশি ভীতু না হলেও
    মেয়েটিকে ‘ভালোবাসি’ বলার মত সাহস তাঁর
    ছিলনা। আসলে সে তাঁর যোগ্যতা নিয়ে অনেক
    বেশি সন্দিহান ছিল। ছোটকাল থেকেই সে তাঁর
    বাবা-মার মুখে সে সুনে এসেছে, “তুই বড় হয়ে ট্রাক
    ড্রাইভার হবি।”
    কলেজ লাইফ এ কেউ
    কাউকে ভালোবাসলে নাকি,যাকে ভালোবাসে সে ছ
    জানতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সেটা হয়নি। একান-
    ওকান করে কথাটা সবার কানেই গেল।
    ছেলেটি যাকে ভালোবাসতো তাঁর কানেও
    গিয়েছিলো। তাঁর প্রতিক্রিয়া খুব বেশি কিছু
    ছিলোনা। সে শুধু ছেলেটার সাথে আগের মত মিশত
    না। তবে ছেলেটি সবসময় ই সবার সাথে মিশতো।
    একদিন ছোট্ট
    একটি ব্যাপারে ছেলেটি মেয়েটিকে একটু বকা দেয়।
    মেয়েটি খুব বেশি অপমানিত বোধ করে,
    সাথে সাথেই কান্নার মাধ্যমে সেটার বহিঃপ্রকাশ
    ঘটায়। এই কাজের ফলাফল স্বরূপ মেয়েটি ছেলেটির
    সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। ছেলেটি, মেয়েটির
    বান্ধবীদের কাছে থেকে অনেক বলে-কয়ে মেয়েটির
    নম্বর যোগাড় করে। তবে ফোন করে Sorry বলার মত
    সাহস তাঁর ছিলোনা। তাঁর পাক্কা ৩ দিন
    লেগেছিলো মেয়েটিকে Sorry জানাতে। তাও
    মুখে বলে নয় এক বাক্স চকোলেটের উপর লিখে।
    সেদিন মেয়েটি অবশ্য একটু জোরাজুরির পর
    চকোলেটের বাক্সটি নিল ও। তবে তাঁদের
    কথা বলা বন্ধ ই ছিল। এ ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ
    পরে মেয়েটির ফোন থেকে Message আসলো, “will
    you be my friend?”। Message টি পাবার
    সাথে সাথেই ছেলেটির জ্বর উঠে গেলো। সে অনেক
    কষ্টে ফিরতি Message পাঠালো, “YES”.
    তারপর শুরু হল পথছলা। প্রথমে বন্ধু হয়ে । তারপর
    ভালোবাসার মানুষ হয়ে। তাঁরা দুজন ই জানতো একজন
    আরেকজনকে ভালোবাসে ।
    তবে কখনো বলা হয়ে ওঠেনি। একদিন সন্ধায়
    ছেলেটি কোথাও বেড়াতে জাচ্ছিল।
    সে মেয়েটিকে বলল যে, যদি কোন
    দুর্ঘটনা ঘটে তাদের হয়তো আর কখনো দেখা হবেনা।
    মেয়েটি আর নিজের মনের
    কথাগুলো লুকিয়ে রাখতে পারলো না।
    সে ছেলেটিকে জানিয়েই দিলো তাঁর ভালোবাসার
    কথা। ছেলেটির তখন আনন্দে আত্মহারা হবার পালা,
    যেন পুরো পৃথিবী তাঁর হাতের মুঠোয়।
    এভাবে তাদের স্বপ্নগুলো এগিয়ে যেতে থাকলো।
    তবে কথায় আছেনা, “রাত যত গভীর হয়,প্রভাত তত
    নিকটে আসে”; তেমনি “গোধূলির মায়াময় স্নিগ্ধ
    সময়ের পরই সন্ধ্যা নামে”। তাদের
    একসাথে বোনা স্বপ্নগুলোর সময়কাল ও হয়তো তাই
    দীর্ঘস্থায়ী হলোনা। তারপর
    মেয়েটি ধীরে ধীরে ছেলেটি থেকে আলাদা হয়ে যে
    ইতোমধ্যে তাদের HSC Test পরীক্ষা চলে আসায়
    ছেলেটি এত্তো কিছুতে নজর দেয়না। এ
    পর্যায়ে বলে রাখা ভাল, ছেলেটি জীবনের সব
    কিছুতেই অনেক উদাসীন ছিলো। তাঁর এ উদাসীনতা ই
    তাঁর জন্য ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াল। ছেলেটি যখন
    মেয়েটিকে ঠিক ভাবে লক্ষ্য করা শুরু করলো, তখন
    সে বুঝে উঠলো- মেয়েটি আর তাকে ভালোবাসেনা।
    সে আজ অন্য কারো। অন্য কারো চোখে চোখ
    রেখে মেয়েটি হারিয়ে যায় স্বপ্নের
    সোনালি দিগন্তে।
    ছেলেটা তার মনের সব ব্যাথাকে মনের মাঝেই
    চাপা দিয়ে HSC পরীক্ষা দিলো। আশানুরূপ সাফল্য ও
    লাভ করলো। তারপর আবার বাবা-মার স্বপ্ন পুরনের
    লক্ষ্যে কোচিং এ ভর্তি হল। ছেলেটি ও
    মেয়েটি একি প্রতিষ্ঠান এ ই কোচিং করতো।
    তবে তাদের মাঝে কক্ষনো কোন কথা হয়নি।
    ভর্তি পরীক্ষা আসলো। দুজন ই ভর্তি পরীক্ষা দিলো।
    ছেলেটি মোটামুটি ভালো ফলাফল অর্জন করলো।
    প্রথমবারের মত তার কারনে সে তার বাবার
    মুখে কোনে হাসির রেখা দেখতে পেলো। এর
    চেয়ে বড় পাওয়া একজন সন্তানের জন্য কি ই
    বা হতে পারে।
    তার জীবন ভালো ই চলছিলো। নতুন
    প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলো। নতুন বন্ধুরা তাঁর
    পৃথিবীটাকে আবার রঙিন করে ফেললো। ৩ জন বন্ধু
    ছেলেটির হৃদয়ের খুব বেশি কাছে চলে আসলো। যেন
    তাঁর নতুন জীবনের সূচনা হলো,নতুন অভিজ্ঞতায়, নতুন
    উপলব্ধিতে।
    হেসে-খেলে তাঁর জীবনটা ভালো ই যাচ্ছিলো।
    তারপর হঠাৎ একদিন মেয়েটির ফোন। প্রথমবার ফোন
    করে মেয়েটি কিছুই বললো না। তারপর ও ছেলেটি,
    মেয়েটির নিঃশ্বাসের শব্দতেই বুঝে নেয়
    যে কে ফোন দিয়েছে। সেদিন ছেলেটি মেয়েটির
    সাথে কথা বললো ঠিক ২ বছর পর। মেয়েটি বলেছিল
    সেদিন, তাঁর আগের ছেলেবন্ধুর সাথে তাঁর Break up
    হয়ে গিয়েছে। ছেলেটি সব গুলো কথা নিশ্চুপ
    হয়ে শুনে গেল। মেয়েটি এবার ও ছেলেটির বন্ধু হয়ে ই
    থাকতে চাইলো। ছেলেটা ঠিক আছে বললে ও, তাঁর
    বাঁধ ভাঙ্গা আবেগের কাছে হার মেনে,প্রথমবারের
    মত তাঁর সবটুকু
    অনুভূতিকে একসাথে জড়ো করে মেয়েটিকে বললো ,
    “ভালোবাসি”।
    তারপর মেয়েটি ছেলেটিকে জানাল,তার আগের
    ছেলেবন্ধুর সাথে তাঁর শুধু মানসিক নয়, শারীরিক
    সম্পর্কও ছিল। এটা জানার পরও
    ছেলেটি মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিল,এই বলে যে,এরকম
    ছোটোখাটো ভুলতো সবাই করে। ছেলেটি সেদিন
    নিজের ভেতর জ্বলে-পুড়ে গেলো। প্রথমবারের মত
    সে খুব বেশি অসহায়ত্ব অনুভব করলো। নিজেকেই
    নিজের কাছে অনেক হীন মনে হলো তাঁর।
    তারপরও একদিন সে মেয়েটিকে বলেই ফেললো,
    “তুমি যেভাবেই আছো তাতেই আমার
    চলবে,আমি তোমার অতীত জানতে চাইনা।”
    মেয়েটি ও প্রতিজ্ঞা করলো, “আমি আর কখনই
    তোমাকে ছেড়ে যাবোনা।” ছেলেটি তাঁর সবকিছু
    বিসর্জন দিয়ে হলেও
    মেয়েটিকে ফিরে পেতে চেয়েছিল। তবে মেয়েটির
    প্রতিজ্ঞা শুধু তাঁর একটা মুখের কথাই ছিল। তার
    অন্তরে হয়তো অন্য কিছু ছিল। সে আবার তার আগের
    ছেলে বন্ধুটির সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। এবার
    ছেলেটি মেনে নিতে চায়না,তারপরও
    তাকে মেনে নিতে হয়। কারন ছেলেটা একবার
    মেয়েটিকে প্রতিজ্ঞা করেছিলো, “তুমি আমার
    সাথে থাক কিংবা না থাকো,
    তুমি ভালো আছো এটা জানলেই
    আমি ভালো থাকবো।”
    ছেলেটি আজ মেয়েটিকে ভালোবাসেনা ,
    হয়তো ভালবাসতে চায় ও না। তারপর ও কেন
    জানি গভীর রাতে আজ ও তাঁর কক্ষ
    থেকে ভেসে আসে,
    “………. তুমি আবার আসবে ফিরে, বিশ্বাসটুকু
    দুহাতে আঁকড়ে ধরে…………”
    গানটির সুর।

    No comments

    Post Top Ad

    Post Bottom Ad